বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। যেসব কারণে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন করা দরকার সেইসব কারণসমূহ এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে।

কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যা একজন মানুষকে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে একজন যোগ্য কর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে কারিগরি শিক্ষা ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে; যার ফলে প্রতি বছর এই দেশগুলোর দক্ষ জনশক্তির সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উন্নয়ন তরান্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ১ নং সংসদীয় কারিগরি শিক্ষা আইনবলে, ১৯৬৭ সালে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত হলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখনো এটি তেমন প্রসার লাভ করতে পারে নি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে এবং দেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে হলে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নের বিকল্প নেই।    

কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

একটি দেশের উন্নয়ন সাধনে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশে যেসব কারণে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নত করা দরকার তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:  

বেকারত্ব দূরীকরণে

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র আয়তনের এই দেশের এক বিরাট জনগোষ্ঠী বেকারত্বের স্বীকার। প্রতি বছর প্রায় তিন লক্ষ তরুণ-তরুণী পড়াশোনা শেষ করে চাকরীর অভাবে বেকারত্বের খাতায় নাম লিখাচ্ছে। চাকরি প্রার্থীর তুলনায় দেশে সরকারি বা বেসরকারি খাতে চাকরির সংখ্যা কম। তাই দেশে শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে যদি সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার মান ও উন্নত হতো এবং ছাত্রসমাজ যদি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হতো তাহলে দেশে এই বেকারত্বের সৃষ্টি হতো না। তারা তাদের নিজ নিজ কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব দূর করতে পারত। 

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে

একটি দেশের অর্থনীতির চাকা যদি সচল না থাকে তাহলে সে দেশের উন্নয়ন দ্রুত তরান্বিত হয় না। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কারিগরি শিক্ষার দিকেও দেশকে হতে হবে উন্নত। কারিগরি শিক্ষায় উন্নত দেশসমূহ নিজের দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র-পাতি উৎপাদনের মাধ্যমে নিজের দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে যা তাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করছে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজকেও যদি সঠিক কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদনের কাজে লাগানো যেত তাহলে তারাও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারত। 

দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলতে

যেকোন দেশের জনসংখ্যাই সেদেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ যদি তা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়।  একটি দেশের জনসংখ্যা তখনই জনশক্তিতে পরিণত হবে যখন তার প্রত্যেকটি কর্মোক্ষম ব্যক্তি বিভিন্ন পেশায় বা উৎপাদন খাতে নিয়োজিত থাকবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই। প্রতিবছর বিভিন্ন নির্মানাধীন কাজের জন্য দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব থাকায় বাইরের দেশ হতে লোকবল নিয়োগ করতে হয়। কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দেশের জনগণকে যদি  কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর করা যায় তবে এটি দেশ তথা সমগ্র জাতির উন্নয়নের কাজে আসবে। 

কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে 

বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা যতই প্রসার লাভ করবে ততই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃস্টি হবে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দক্ষ জনশক্তিরা দেশে নতুন নতুন উৎপাদন খাতের উদ্ভাবন করতে পারবেন। এইসব নতুন কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে বহু সংখ্যক কর্মীর। আর তার চাহিদা পূরণ করতে দেশের জনবলকে কাজে লাগালে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে সেই সাথে দেশের উন্নতিও তরান্বিত হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এসকল দক্ষ জনশক্তিকে বিদেশে প্রেরনের মাধ্যমে দেশের বাহিরেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃস্টি হবে।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে

বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে দেশের বহুমুখী উন্নয়ন সাধিত হবে। দেশের বেকারত্ব হ্রাস পেলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটবে ঠিক তেমনি পারিবারিক স্বচ্ছলতার কারণে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। বেকারত্বের কারণে এদেশের বহু প্রতিভাবান তরুণ হতাশার অতল গহব্বরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। যার কারণে ধ্বংস হচ্ছে হাজারো পরিবারের সুখ-শান্তি। দেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হলে কারিগরি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষন গ্রহনের মাধ্যমে এদেশের তরুণ-সমাজ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে। এর ফলে তাদের পরিবার তথা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে। 

কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা, দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব, মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার অভাব, কাঁচামালের অভাব, সর্বোপরি সরকারি তদারকির অভাবে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার মান এখনো অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এসব বাধা নিরসন করে দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নত করা প্রয়োজন। কারণ অদক্ষ জনবল নিয়ে কখনোই দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যদি সঠিক কারিগরি শিক্ষা দানের মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায় তাহলেই বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হতে উন্নত দেশে পরিণত হবে।  

FAQ

  • বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন করতে বাংলাদেশ সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

উত্তর- দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে বাংলাদেশ সরকার কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারে নানামূখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে এক হাজার চল্লিশ কোটি টাকার প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নিয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল ও পলিটেকনিক স্কুল স্থাপন করা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে মোট শিক্ষার্থীর ২০ ভাগকে কারিগরি শিক্ষার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। 

2 thoughts on “বাংলাদেশে কেন কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন!

  1. Hey there! This is my 1st comment here so I just wanted to give a quick shout out and say I truly enjoy reading through your articles. Maribeth Dion Goodhen

  2. After I initially commented I appear to have clicked the -Notify me when new
    comments are added- checkbox and now whenever a comment is added I get four emails with the exact same comment.
    Is there a means you can remove me from that service?

    Many thanks!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *