বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এবং এই খাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে “বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট  ডেভলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)” আইন পাশ করা হয়। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনই বিডা’র মূল লক্ষ্য। দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে কাজ করছে বিডা। এছারাও এই সরকারি সংস্থাটি বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান এবং সহযোগিতা প্রদানের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ এবং বিনিয়োগ পরবর্তী বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে।  

কতগুলো সুনির্দিষ্ট ধারার সমন্বয়ে বাংলাদেশে বিডা-এর আইন পাশ করা হয়। নিম্নে সেই ধারাসমূহের কয়েকটি ধারা সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো :স

প্রবর্তন, সংজ্ঞা ও আইনের প্রাধান্য

এই আইন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬ নামে পরিচিত এবং সরকার নির্ধারিত তারিখ হতে এই আইন বাংলাদেশে কার্যকর হবে।     

এই আইনে লিপিবদ্ধ বিডা-র সংজ্ঞা অনুযায়ী, এর কর্তৃপক্ষের ধারা ১৫ এর উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী অনুমোদনপত্র এবং অনুমোদিত শিল্প থাকতে হবে। এর সংজ্ঞায় আরো কিছু বিষয় উল্লেখ করা আছে যেমন : কর্তৃপক্ষ, চেয়ারম্যান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিষদ, নির্বাহী সদস্য, নীতিমালা, প্রবিধান, বিধি, ব্যাক্তি, বেসরকারি খাত, সদস্য, সচিব, সরকারি শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান; এই সকল বিষয়াদি বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটির থাকতে হবে। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে অন্য কোন আইনে আর যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানবলি প্রাধান্য পাবে।  

বাংলাদেশে এই আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে বেসরকারি খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিডা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা ইতিমধ্যে দেশের আটটি বিভাগে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।  

কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা, কার্যালয় ও কার্যাবলি

এই আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশে সংবিধিবদ্ধভাবে “বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ”  নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা হবে যার সাধারণ সীলমোহর থাকবে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা থাকবে। ঢাকায় বিডা-এর প্রধান কার্যালয় থাকবে এবং সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবোধে এর শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। বিডা-এর কর্তৃপক্ষ এই আইন অনুযায়ী কিছু কার্যাবলি সম্পন্ন করবেন। যেমন :  বেসরকারি খাতে সকল ধরনের বিনিয়োগে সুযোগ-সুবিধা প্রদান, এ খাতে সরকারের নীতি বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ-তফসিল প্রণয়ন, এলাকা-তফসিল প্রণয়ন, শিল্প প্রকল্প অনুমোদন ও নিবন্ধীকরণ,বেসরকারি খাতসমূহ  চিহ্নিতকরণ এবং দেশে বিদেশে উহার বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করা, অবকাঠামোগত সুবিধা সৃষ্টিকরণ, শিল্প-বিনিয়োগ-পুঁজি গঠনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ, যেকোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা দূরীকরণের জন্য যেকোন আইনগত বা প্রশাসনিক ব্যাবস্থা গ্রহণ ও আরো বিভিন্ন কার্যাবলির সম্পাদনের সাথে সাথে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি এই কর্তৃপক্ষ সম্পাদন করবেন। 

বিডার কার্যক্রমকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক না রেখে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিডার কার্যক্রম বিভাগীয় শহর থেকে প্রতিটি জেলায় পৌঁছে গেছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারণার অভাবে এটি এখনো জনসাধারণের বোধগম্য হয়ে উঠেনি। 

গভর্নিং বোর্ড ও গভর্নিং বোর্ডের সভা

বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিডা-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং আরো কয়েকটি সংস্থার চেয়ারম্যান ও সভাপতি নিয়ে সদস্য সমন্বয়ে এর গভর্নিং বোর্ড গঠিত হবে। নির্বাহী চেয়ারম্যান গভর্নিং বোর্ডের সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন এবং গভর্নিং বোর্ড প্রয়োজনে কোন ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করতে পারবে। 

গভর্নিং বোর্ডের সকল সভা চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে এর সদস্য-সচিব দ্বারা আয়োজন করা হবে এবং প্রতি সভায় চেয়ারম্যান সভাপতিত্ব করবেন। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ভাইস-চেয়ারম্যান এবং তারও অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যান দ্বারা মনোনীত অন্য কোন সদস্য সভা পরিচালনা করবেন এবং যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সভায় উপস্থিত সকলের একটি করে ভোট থাকবে।

যেহেতু বিডা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো বেসরকারি খাতের উন্নতিসাধন সেহেতু, এর গভর্নিং বডিতে বেসরকারি পর্যায়ের লোকদের সদস্য হিসেবে রাখলে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা হতো।

বেসরকারি খাতে শিল্প প্রকল্প অনুমোদন, ইত্যাদি

এ আইন অনুযায়ী বেসরকারী খাতে শিল্প স্থাপনে ইচ্ছুক প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রস্তাবিত শিল্প প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত নিয়মে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে। উপ-ধারা (১) এর অধীনে প্রাপ্ত সুপারিশ অনুমোদনযোগ্য মনে হলে কর্তৃপক্ষ উৎপাদনের সময়সীমা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করে অনুমোদন প্রদান করবে। শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামোগত সুবিধাসমূহ দ্রুত দেওয়ার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস থাকবে। 

এ আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে বেসরকারি খাতেও প্রসাশনিক দৌরাত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নির্ধারিত সময়সীমা ও বিভিন্ন বিষয়ের জন্যে কখনো কখনো বেসরকারি খাতেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশে অনলাইন ওয়ানস্টপ সার্ভিস ব্যাবস্থা চালু হয়েছে। 

সুবিধাসমূহ

  • দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে।
  • দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • বেসরকারি খাতে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ।
  • বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • বেসরকারি খাতে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
  • দেশে বেকারত্ব হ্রাস পাচ্ছে। 

অসুবিধাসমূহ

  • অনুমোদন প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়া।
  • নির্দিষ্ট বিষয়াবলীর কারণে উৎপাদন হ্রাস পাওয়া।

বাংলাদেশ সরকার মূলত বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধাসমূহ চিহ্নিত করে সেসব বাধা নিরসনের লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) গঠন করেন। যার ফলে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, বেসরকারি খাতে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি তরান্বিত হয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *