বাংলাদেশে রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী সার্ভিস পরিচালনার ক্ষেত্রে রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ একটি গাইড হিসেবে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে সাহায্য করে থাকে। যা সরকারি নীতিমালা পালনে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), জনস্বার্থে ‘রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ অনুমোদন করেন। উক্ত নীতিমালার প্রস্তাবনা অনুযায়ী, দেশে ব্যাক্তি মালিকানাধীন মোটরসাইকেল, মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস ইত্যাদি সাধারণত একক ব্যাক্তি বা পরিবার ব্যাবহার করে থাকে। যার সীমিত ব্যবহারের কারণে দেশে মোটরযানের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যার ফলে মহানগরীতে যানযটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে জণগণের মূল্যবান শ্রম- ঘন্টা ও জ্বালানির অপচয়সহ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ব্যাবহারের পর অতিরিক্ত সময়ে ব্যাক্তি মালিকানাধীন মোটরযান যদি ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রী বহনের সুযোগ পায় তাহলে মোটরযানের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং শহরে যানযটের সংখ্যাও কমবে।
এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারও বিশ্বের বহুদেশের ন্যায় ইন্টারনেট ভিত্তিক সফটওয়্যার এপ্লিকেশনের মাধ্যমে রাইডশেয়ারিং সার্ভিস চালু করে ব্যাক্তি মালিকানাধীন মোটরযানকে যাত্রী বহনের কাজে লাগানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ভিত্তিক এপস ব্যবহার করে মালিক এবং যাত্রী উভয়েই উক্ত সেবাটি নিতে পারবেন। জনস্বার্থে জারীকৃত এ নীতিমালা ০৮ মার্চ ২০১৮ থেকে কার্যকর হয়েছে।
এ নীতিমালায় ৮টি অনুচ্ছেদ ও ১২ টি শর্ত রয়েছে। অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের সকল তথ্য নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
অনুচ্ছেদ ক: রাইডশেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার শর্তাবলি
রাইডশেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ১২টি শর্তাবলী প্রদান করেন। এই শর্তগুলো হলো:
১. সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে তালিকাভুক্তির সনদ নিতে হবে।
২. পাবলিক বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সকল শর্তাদি মেনে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণ টিআইএন (TIN) ও ভ্যাট পূর্ণ নম্বরধারী পাবলিক বা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে।
৩. প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস এলাকায় নিজস্ব অফিস থাকতে হবে এবং সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, যাত্রী চাহিদা, সড়ক নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি, সেবাপ্রদানে নিয়োজিত মোটরযানের সংখ্যা ইত্যাদির ভিত্তিতে রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের অধিক্ষেত্র বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
৪. বিআরটিএ রাইডশেয়ারিং সেবা পরিচালনার জন্য মহানগর ও শহর অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক মোটরযান ব্যবহরের জন্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে থাকে। সার্ভিসটি পরিচালনার জন্য ঢাকায় কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রামে ৫০টি এবং অন্য জেলা শহরে ২০ টি গাড়ি থাকতে হবে।
৫. রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় সকল প্রকার ব্যাক্তিগত মোটরযান অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।
৬. এই সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরযানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হালনাগাদ থাকতে হবে।
৭.’এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ প্রাপ্তির পর রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মোটরযানের মালিক ও চালকের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি থাকতে হবে, যেখানে সকল পক্ষের অধিকার ও দায়-দায়িত্বের বিষয় উল্লেখ থাকবে।
৮. নির্ধারিত পার্কিং স্থান ব্যতীত এই সার্ভিসের মোটরযান রাস্তায় যেখানে সেখানে অপেক্ষমান থাকতে পারবে না এবং যাত্রী উঠানো নামানো ছাড়া চলাচল অবস্থায় থাকতে হবে ।
৯. এ নীতিমালা অনুযায়ী একজন মোটরযান মালিক কেবল একটি মোটরযান রাইডশেয়ারিং সেবার আওতায় রাখার অনুমতি পাবেন।
১০. রেজিষ্ট্রেশনের পর ন্যূনতম এক বছর অতিক্রান্ত না হলে ব্যক্তিগত মোটরযানকে এই সার্ভিসের আওতায় নিয়োজিত করা যাবে না।
১১. বিআরটিএ’র ওয়েব পোর্টালে এই সেবার আওতাধীন সকল মোটরযানের তালিকা রাখতে হবে এবং যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর সুযোগ রাখতে হবে।
১২. ৯৯৯ ব্যবহারের নির্দেশিকা সম্বলিত স্টিকার সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরযানের দৃশ্যমান স্থানে লাগানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এ নীতিমালার অধীন একজন মোটরযান মালিকের কেবল মাত্র ১টি মোটরযান রাখার শর্তটি বর্ধনশীল এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। রাইডার, মালিক বা মোটরযানকে একাধিক রাইডশেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে না দেওয়া প্রতিযোগিতামূলক এই খাতে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি হবে। এই শর্তটি অর্থনীতিতে অবদান রাখা নতুন এই খাতের জন্য নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতেও বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
অনুচ্ছেদ খ: রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্ব
রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের প্রতি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। রাইডশেয়ারিং এপস-এ এমন একটি এসওএস (SOS) সুবিধা রাখতে হবে, যার বোতাম স্পর্শে সাথে সাথে চালকের সকল তথ্য ও যাত্রীর জিপিএস লোকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৯৯৯ নম্বরে চলে যাবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে এপ্লিকেশন ইনস্টলেশন, এর ব্যবহার ও এর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চালককে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যাবস্থা করতে হবে। এপ্লিকেশনের মাধ্যমে ভাড়া সম্পর্কিত সকল তথ্য যেন যাত্রীরা যাত্রা শুরুর পূর্বেই জানতে পারে তা নিশ্চিত করতে হব। যাত্রা সংবলিত সকল বিবরণ যাত্রী যেন ভ্রমণ শেষে এসএমএস বা ই-মেইলের মাধ্যমে পেতে পারেন সে সুবিধা এপসে থাকতে হবে এবং কমপক্ষে ৩ মাস তা সার্ভারে সংরক্ষণ করতে হবে।
বিআরটিএ’র ওয়েবসাইট ও রাইডশেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের এ্যাপসে অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তির সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে। অনলাইনে প্রাপ্ত অভিযোগ প্রচলিত বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তিপূর্বক অভিযোগকারীকে অনলাইনে অবহিত করতে হবে। বিআরটিএ বা অন্যকোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কারো নিকট রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চালক বা যাত্রীর সনাক্তযোগ্য কোন তথ্য প্রকাশ করবে না। সার্ভিসে নিয়োজিত কোন মটরযানের মালিকানা সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দাবি করতে পারবে না। মোটরযান চালকের সকল প্রকার হালানাগাদ তথ্যাদি রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করবে। রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ অনুযায়ী সেবা প্রদানে ব্যবহৃত এপসটি বিআরটিএ অথবা সরকার অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের নিকট হতে অনুমোদন করাতে হবে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে চালকের ছবি, নাম, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ মোটরযানের অবস্থান যেন যাত্রীরা ভালোভাবে অবলোকন করতে পারেন সে সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি যাত্রা প্রয়োজনে পুলিশ যেন কন্ট্রোল রুম থেকে অবলোকন করতে পারেন সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রী ও চালকের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে পুলিশ কন্ট্রোল রুমকে জরুরি বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা এপ্লিকেশনে থাকতে হবে।
তবে রাইডশেয়ারিং এপস-এ এসওএস সুবিধা রাখার শর্তটি অন্য আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান-এর উপর নির্ভরশীল। ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে তথ্য পুলিশ কন্ট্রোল রুমে পৌঁছাতে এবং এবং সহযোগিতা পেতে কতো সময় লাগতে পারে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। চালকের সকল প্রকার তথ্যাদি ভেরিফিকেশনের জন্য অন্য একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন এর তথ্য ভাণ্ডারের উপর নির্ভরশীল হতে হবে যাতে কতো সময় লাগতে পারে বলা সম্ভব নয়।
অনুচ্ছেদ গ: রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট প্রদান পদ্ধতি
কোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত “রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট” ব্যতীত রাইডশেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনা করতে পারবে না। ‘এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ এর জন্য বিআরটিএ’র নিকট অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে এক লক্ষ টাকা এনলিস্টমেন্ট ফিস, ট্রেড লাইসেন্স, ইটিআইএন সার্টিফিকেট, ভ্যাট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হব। আবেদনপত্র গ্রহণের পর কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে এক বছর মেয়াদে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট প্রদান করবে। সার্টিফিকেট-এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস পূর্বে নবায়নের জন্য আবেদন করতে পারবে প্রতিবছরে যার ফিস দশ হাজার টাকা। এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটটি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে ১০০০ টাকা ফি প্রদানপূর্বক প্রতিলিপি সংগ্রহ করতে হবে। রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ অনুযায়ী রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বা অন্যকোনো পরিবর্তনের কারণে সার্টিফিকেটে বর্ণিত বিবরণের কোন সংশোধন করতে হলে ১০০০ টাকা ফি প্রদান করে সংশোধন করতে পারবে।
যেহেতু এটি একটি ক্রম বর্ধনশীল অর্থনৈতিক খাত সেহেতু ফিসের পরিমাণ কিছুটা কম হলে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বেশ সুবিধা হতো। এতে করে অর্থনীতিতেও এর ভালো প্রভাব পড়তে পারতো।
অনুচ্ছেদ ঘ: রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট প্রদান পদ্ধতি
রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও কতোগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা মোটরযানের মালিক বা চালক অন্যকোনো মোটরযান দিয়ে সার্ভিস পরিচালনা করতে পারবে না যদি না সে মোটরযানের রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট থাকে। রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে ইনস্টলকৃত ওয়েবপোর্টাল এর মাধ্যমে অনলাইনে ফরম-গ পূরণ করে আবেদন করতে হবে। রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ অনুযায়ী মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট একবারে তিন বছর মেয়াদে প্রদান করা যাবে৷ মেয়াদ শেষে তা নবায়ন করা যাবে এবং প্রতি বছরের জন্য মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ফিস হবে ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য মোটরযানের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা। আবেদন গ্রহণের পর যাচাই-বাছাই করে ফরম-ঘ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ অনলাইনে সার্টিফিকেট প্রদান করবে। রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে ১০০০ টাকা ফি প্রদান করে প্রতিলিপি সংগ্রহ করতে হবে এবং মোটরযানের মালিক, চালক বা চালকের ঠিকানা পরিবর্তন হলে নতুন বিবরণ এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৫০০ টাকা ফি প্রদান করে সংশোধন করতে হবে।
এ অনুচ্ছেদের প্রথম ধারা অনুযায়ী মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট ব্যাতীত, মটরযান চালক এই সার্ভিসে অন্য কোন মটরযান ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি তার মোটরযান নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তাকে এই সেবা বন্ধ রাখতে হবে যা তার নিত্য রোজগারের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে।
অনুচ্ছেদ ঙ: রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের ভাড়ার হার
রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ অনুযায়ী রাইডশেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরযানের ভাড়া ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন, ২০১০’ অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার বেশি হতে পারবে না। তবে কোন ধরনের ভাড়া সংক্রান্ত অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সরকার সে ক্ষেত্রে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে।
যেহেতু ট্যাক্সিক্যাব নানা ধরনের আমদানির সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এবং রাইডশেয়ারিং-এ কোন এধরনের কোন সুবিধা নেই, সেক্ষেত্রে রাইডশেয়ারিংসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভিন্ন একটি ভাড়া কাঠামো অনুসরণ করা উচিত। রাইডশেয়ারিং সার্ভিস পদ্ধতি ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস পদ্ধতির চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন তাই রাইডশেয়ারিং সার্ভিসে সময়োপযোগী ভাড়া নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।
অনুচ্ছেদ চ: অন্যান্য বিষয়
এই অনুচ্ছেদে আরো অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন:
বিআরটিএ এর ওয়েবসাইটে সকল ধরনের তথ্য সংরক্ষণসহ কারিগরি সহায়তায় সকল খরচ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নিজে বহন করবে। বর্ণিত ওয়েবপোর্টাল বিআরটিএ-এর মালিকানাধীন থাকবে এবং পাসওয়ার্ড বিআরটিএ কে হস্তান্তর করতে হবে। যাবতীয় ফি সমূহ বিআরটিএ এর অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমে প্রদান করতে হবে। চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। এপ্লিকেশন লগইন ও লগ-অফ করা চালকের জানা থাকতে হবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এর কোন তথ্য বাংলাদেশের বাইরে প্রেরণ করা যাবে না। রাইডশেয়ারিং এপস- এ ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কলসেন্টার সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা খুলা রাখার কথা বলা হয়েছে এ নীতিমালায়।
অনুচ্ছেদ ছ: আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ
রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ মোতাবেক, কোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা মোটরযান মালিক বা চালক যদি এ নীতিমালার শর্ত ভঙ্গ করে তবে প্রতিষ্ঠানের বা মোটরযানের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট বাতিল করা হবে। রাইডশেয়ারিং মোটরযান চালককে মোটরযান আইন বিধি বর্ণিত দায়িত্ব-কর্তব্য ছাড়াও আরো কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। কোন ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হলে রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তা সমাধান করবে আর সমাধান সম্ভব না হলে বিআরটিএ তা সমাধান করবে।
এতো নিয়মকানুন অনেক সময় এই সেবাখাতের জন্য বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে যা এই খাতের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাধাস্বরূপ। কেবলমাত্র সঠিক নিয়ম-কানুনের অভাবে যেদেশে গণপরিবহন ব্যাবস্থা এতো ভালো না সেখানে রাইডশেয়ারিং সেবাখাতে এতো এতো নিয়মকানুন সার্ভিসটি পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। যখন সকলের কাছে এই সার্ভিসটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলো তখন বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কথা বলে সার্টিফিকেট দিতে বিলম্ব করা হচ্ছে। তাই এমন প্রযুক্তিনির্ভর খাতের জন্য সরকারেরও উচিত সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটালাইজেশন এর মাধ্যমে কাজের গতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
অনুচ্ছেদ জ: নীতিমালার সংশোধন/সংযোজন/পরিবর্তন সম্পর্কিত
যেকোনো প্রয়োজনে সরকার এ নীতিমালার সংশোধন/ সংযোজন/পরিবর্তন করতে পারবে।
সুবিধাসমূহ:
১. জনগণের ভোগান্তির নিষ্পত্তি।
২. ভুয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুবিধা নেই।
৩. দক্ষ চালক দ্বারা পরিচালিত রাইডশেয়ারিং ব্যবস্থা।
৪. উপযুক্ত মোটরযান দ্বারা পরিবহন ব্যবস্থার নিশ্চিতকরণ।
৫. চালক ও যাত্রীদের জীবন ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
৬. চালক হিসেবে এই খাতে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
৭. বিশ্বাসযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থার নিশ্চিতকরণ।
৮. অনলাইন ভিত্তিক স্মার্ট যোগাযোগের ব্যাবস্থা।
৯. দেশে উদ্যোক্তার সৃষ্টি হয়েছে।
অসুবিধাসমূহ:
১. সার্টিফিকেট প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়া ।
২. সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা হ্রাস পাওয়া।
৩. সেবাটি এপস নির্ভর হওয়ায় সকলের ব্যবহারের অযোগ্য।
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। জায়গার তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হওয়াতে প্রতিনিয়ত দেশের জনবহুল এলাকায় যানযটের সৃষ্টি হয়। এবং গগণপরিবহনের অভাবে যাত্রীদের রাস্তায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এমতাবস্থায় রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সকলের জন্যই আশীর্বাদস্বরূপ। এই ব্যবস্থার প্রচলন দেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য সুবিধাজনক। রাইডশেয়ারিং সার্ভিস পদ্ধতির জন্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন মোটরযানের সংখ্যা কমেছে এবং জনগনের সময় লাঘব হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ প্রনয়নের মধ্য দিয়ে একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যার দ্বারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই আমদের দেশ ও দেশের জনগণও উপকৃত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক খাতেও একটি দ্বারের উন্মোচন হলো। এ নীতিমালা প্রণয়নের আগেও দেশে রাইডশেয়ারিং ব্যবস্থা চালু থাকলেও সরকারি নীতিমালার অভাবে এ ব্যবস্থা এতো বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। কিন্তু নীতিমালা প্রণয়নের কারণে এখন এটি সবার মাঝেই একটি বিশ্বাসযোগ্য সেবাখাতে পরিণত হয়েছে।
FAQ
প্রশ্ন: বাংলাদেশে প্রথম রাইডশেয়ারিং ব্যবস্থা কত সালে চালু হয়?
উত্তর: ২০১৬ সালের শেষের দিকে ‘পাঠাও’ দেশে রাইডশেয়ারিং ব্যবস্থার চালু করে। পাঠাও’ বাংলাদেশের একটি রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্ন: রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ প্রণয়নের পূর্বে বাংলাদেশে কী কোন রাইডশেয়ারিং ব্যবস্থা চালু ছিল?
উত্তর: ‘পাঠাও’ বাংলাদেশের একটি রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশে রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ প্রণয়নের পূর্বে তারা দেশে প্রথম যাত্রীদের জন্য রাইডশেয়ারিং ব্যবস্থার চালু করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের রাইডশেয়ারিং সার্ভিসে কোন কোন প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে?
উত্তর: বাংলাদেশে রাইডশেয়ারিং সার্ভিসে পাঠাও, উবার, ওভাই সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে।
প্রশ্ন: রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত করা হয়েছে? উত্তর: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনস্থ বিআরটিএ সংস্থাপনা অধিশাখা রাইডশেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ বাস্তবায়ন করে।
excellent as well as outstanding blog site. I truly intend to thanks,
for giving us much better details.